ভুতের রহস্য ১
ভুতের রহস্য ১
১৩।৯।২০১৭
৩ ৯ ৭ প্রথমেই
বলি দিনটা কারো হয়তো খুব ভাল কাটবে কিন্তু কিছু মানুষের জন্য খারাপ । সুতরাং সাবধানে
থাকুন । ভালো থাকুন ।
গল্প বলার আগে
একটু নিজের কথা বলি । পেশাতে আমি একজন সুতা-কলের ম্যানেজার । সাধরন মানুষ । বাংলা কবিতা
গল্প লিখতে ভালবাসি । কিছু পত্রপত্রিকাতে লেখা ছাপা হয় । তবে ভুতের গল্প লেখার সাহস
আগে হয়নি । ছবি আঁকতে ভালবাসি । অবসর কাটে বাংলা গল্পের বই পড়ে বা টিভি দেখে । আমার
একটা বৌ আছে । তার মতে আমি পৃথিবীর সবথেকে অকর্মণ্য মানুষ ।
বর্তমানে পশ্চিম
আফ্রিকার একটা দেশে আমি ও আমার বৌ বাস করি ।ছেলে মেয়ে ভারতবর্ষে চাকরিবাকরি করে । তারা
খুব স্বাধীন । মনে হয় তারা অন্য পৃথিবীর মানুষ । একটা বৌমা আছে । সেই যা একটু কথা শোনে
। বন্ধু হয় না কারণ কথা বলতে ভাল লাগে না । ভ্রমণ নেশা । যাই হোক এই নিয়ে আমি ।
ভুতের গল্পের
আমার একমাত্র শ্রোতা আমার মেয়ে । তাকে শোনাতে হয় । আজ আপনাদের সকলকে শোনাতে বসেছি ।
এটা একটা ঘটনা । সত্যি ঘটনা । আমার বৌকে বলেছিলাম ঘটনাটা । বোঝা গেল না ঠিক কি রিয়াকশন্
। যাই হোক ব্যাপারটা ঘটেছে কয়েকটা সপ্তাহ আগে ।
গত জুলাই মাসে
আমার বৌ দেশে গিয়েছিল । দেশের হাওয়া খেতে । দেশের জল, দেশের মাটির ছোঁয়া, দেশের মানুষের
সান্নিধ্য প্রবাসীদের জীবন-টনিকের কাজ করে । জীবনটা অনেকটা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ করে ।
প্রবাসে টিকে থাকার একটা ঔষধ বলা যায় । তিনি ফিরেছেন দুই সপ্তাহ আগে । এই সময়টা প্রতি
বছর একা থাকতে হয় । এক বার বলেছিলাম ভাল আছি । তার ফল খুব ভাল ছিল না । তাই ঐ সময়টা
ভাল থাকি না খারাপ থাকি আর বলবো না । সবতো বলা যায় না কিছু বুঝে নিতে হয় । যাই হোক
সারাদিন অফিসে কাজ কর্মে দিন কাটতো । অফিস থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভি দেখা তারপর রাতের
খাবার খেয়ে শুয়ে পরতাম । বিছানাতে একটা বই নিয়ে শুলে ঘুম আসতে দেরি হয়না । ছেলেবেলার
অভ্যাস । সন্ধেবেলা বই নিয়ে পড়তে বসলেই চরম ঘুম পেতো । আজও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে
আসছে ।
আমাদের একটা বড়লোকি
অভ্যাস আছে । মুফতে পেলে যা হয় । বাইরে বৃষ্টি । বেশ ঠাণ্ডা । তার মধ্যে দরজা জানালা
বন্ধ করে এসি চালিয়ে লেপ ডাকা দিয়ে আমরা ঘুমাই । শুধু আমি না । বেশির ভাগ ভারতীয় এই
দেশে এসে এটাই করে । সেদিনটাও ব্যতিক্রম ছিলনা । আমার বদ অভ্যাস লেপটা দিয় সারা শরীর
ও মাথা ডাকা দেওয়া । আমি ঘুমিয়ে পরে ছিলাম ।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে
গেল । যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল । স্বাভাবিক লেপ সরিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু অদ্ভুত একটা গন্ধ । ঠিক যেন আমার লেপের মধ্যে বদ্ধ ছিল গন্ধটা । আমি লেপটা খুলে
দিতে প্রথমে দমকা একটা গন্ধ । তারপর গন্ধটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল । ঘড়ি দেখলাম ।
রাত একটা বাজে । ভয় পাইনি । তবে বড় অদ্ভুত লাগলো । ভাবলাম হয়তো লেপের মধ্যে কোন কারণে
গন্ধটা তৈরি হয়েছিল । যথারীতি আমি আবার লেপ ডাকা দিয়ে শুয়ে পরলাম । কখন ঘুম এলো জানিনা
।সকাল হতে কাজের লোক এসে ঘুম ভাঙ্গালও । ঘটনাটা মনে কোন দাগ কাটেনি সে ভাবে । তবে বার বার মনে হচ্ছিল গন্ধটা যেন খুব চেনা । চেনা
হলেও ঠিক মনে করতে পারছিলাম না । যাই হোক বেশি মাথা লাগানোর কারণ ছিল না । যথারীতি
ভুলে গেলাম । দিনটা ছিল বুধবার ২৪শে আগস্ট ।
এরপর আরও দুটো
দিন গেল । সেদিনটা ছিল শনিবার । স্বাভাবিক ভাবে দিনটা একটু শ্লথ গতিতে চলে । রাতেও
শুতে দেরি হয় । পরদিন টা রবিবার । অনেকটা ক্ষণ ঘুমানো যায় । কাজের লোক সকাল ৯টার আগে
ডাক দেয় না । অনেকটাক্ষন টিভি দেখলাম । তারপর রাতের খাবার খেলাম । কাজের লোক চলে গেল
। আমি সদর দরজা বন্ধ করে দোতালায় শোবার ঘড়ে চলে এলাম । সেখানে টিভি তে দেশের খবর চলছিল
যদিও আমি শিরশেন্দু রচনাবলী পড়ছিলাম । একটা সময় টিভি বন্ধ করে বইটা পাশের টেবিলে রেখে
যথারীতি লেপ দিয়ে আপাদমস্তক ডেকে শুয়ে পরলাম । ঘুম আসতে দেরি হয়নি ।
আবার সেই একই
ঘটনা । লেপের মধ্যে সেই গন্ধ । এবার । আমি সচেতন । আমি চিনতে চেষ্টা করলাম গন্ধটা কিসের
। বেশ কয়েক সেকেন্ড হলেও অনেকটা সময় । আমি তারা হুড়ো না করে আস্তে আস্তে লেপটা সরালাম
। অনুভব করলাম লেপটা সরানোর পর গন্ধটা আরও তীব্র হলেও আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল । এবার
আমি বুঝতে পারলাম গন্ধটা কিসের ।
বহু কাল হল দেশছাড়া
। কিন্তু দেশে থাকা কালীন কোনও আত্মীয় বন্ধু বা পাড়া-প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে শ্মশান
যাত্রী হয়ে শ্মশানে গিয়েছি বহুবার । যেহেতু অনেক কাল আর শ্মশানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি
তাই প্রথম দিন গন্ধটা চিনতে পারিনি । পরদিন বুঝলাম এতো শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করারা গন্ধ
। ভয় না পেলেও বুঝলাম কেউ এসেছেন । এটাও বুঝলাম তিনি কোন প্রিয়জন । কোনও ক্ষতির উদ্দেশ্য
নাই । ঘড়িতে তখন তিনটে বাজে । ঠিক কি করবো বুঝতে পারছি না । এই বাড়িটা ডুপলেস্ক । বেশ
বড় বাড়িতে আমি একজন যদিও বাইরে দরোয়ান ও কাজের লোকদের থাকার আলাদা ব্যবস্থা আছে । যথারীতি
একটা সিগারেট ধরিয়ে বাইরে ব্যাল-কনিতে বসলাম । অনেকটা আকাশ দেখা যায় । মনটা খারাপ হয়ে
গেল । অনুমান করার চেষ্টা করলাম । বহুদিন হল দেশের কোনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদ
পাইনি । অবশ্য এটাই রেওয়াজ । দেশে কিছু অঘটন ঘটলে হঠাৎ করে খবর আসেনা । মনে ভাবলাম
পরদিন একজন কাজের লোক কে বলবো পাশের ঘরে শুয়ে থাকতে । প্রয়োজনে কাজে লাগবে । যদিও পরদিনটা
সব কিছুই স্বাভাবিক । যদিও মনটা খারাপ । যদিও তারপর আর ঐ ঘটনার পুনরাবির্তি হয়নি ।
যাইহোক এই ঘটনার
দুদিন পর আমার বৌ কাজল দেশ থেকে ফিরে এলো । তার কাছে জানলাম আমাদের এক বহু পুরাতন বন্ধু
জীবন যুদ্ধে হরে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে গত মঙ্গলবার সকালে ।ডাক্তার পুলিশ করে বুধবার
সন্ধেবেলা তাকে দাহ করা হয়ে ছিল । দিনটা ছিল বুধবার ২৪শে আগস্ট ।
ছেলেবেলার বন্ধু
। মনটা খারাপ হয়ে গেল । শুধু মৃত্যুর কারনে নয় । জীবন-যুদ্ধে হেরে গিয়ে সে পালিয়ে গেল
এটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না । তবে এটাই চরম সত্যি । এ শুধু গল্প নয় । একটা অনুভূতি
। ……….. সমাপ্ত
Comments
Post a Comment