এক টুকরো গল্প


এক টুকরো গল্প 
2/6/2016
আমার জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আছে একদিন হঠাৎ মনে হল সেই অভিজ্ঞতা গুলোকেও গল্পের মত বলা যায় সেই প্রচেষ্টাই করছি দেখি হয় কিনা  
১৯৮২ সাল মাসটা ঠিক মনে নাই তবে শীতকাল এটা মনে আছে কাড়ন বেশ ঠাণ্ডা ছিল আমি তখন উত্তরপ্রদেশে একটা কটন-মিলে কাজ করি মিলটা কানপুর শহর থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দুরে ফাঁকা মাঠের মধ্যে মিল থেকে এক অজ-গ্রাম কিলোমিটার দুরে তবে মিলটা জি টি রোডের ধারে মিল থেকে বাইরে এলে চারদিকে ধুধু মাঠ ছাড়া আর কিছু চোখে পরে না জি টি রোডের ধারে কিছু চায়ের দোকান সেখানে অল্প কিছু লোকজন তাদের নিয়েই সময় কাটতো সব থেকে কাছের শহর ফতেপুর সেও ছিল ১৫ কিলোমিটার দুরে সবে বছর-দুয়েক হল চাকরি করছি অভিজ্ঞতা কিছুই ছিলনা মেশিন মেন্টেনেস্ বিভাগে কাজ করি মিলের হেড-অফিস ছিল কানপুর আমাদের বিভাগে আমিই সবথেকে জুনিয়র একটা নিয়ম ছিল যে প্রত্যেক মাসে আমাদের একটা রিপোর্ট বানিয়ে হেড-অফিসে নিয়ে যেতে হত সেখানে বড়বাবুরা দেখতেন সেই রিপোর্ট আর আমাকে সামাল দিতে হত খুব রাগ হত মিলের স্থানীয় বড়বাবুদের ওপর কারণ ব্যাপারটা খুব সুবিধের ছিলনা কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তী কালে অনেক সাহায্য করেছিল আমার কর্মজীবনের সমস্যা সামাল দিতে  
সে যাই হোক যা বল ছিলাম সেটা হল এই যে রিপোর্ট নিয়ে আমি সকালের বাসে কানপুর যেতাম আর বিকেলে বাসে চেপে রাত ৯টা ১০টা নাগাদ বাসায় ফিরতাম একদিন কি হল রাস্তায় কোন গণ্ডগোলর কাড়নে রাস্তা বন্ধ কোন গাড়ি চলবে না প্রায় মাঝামাঝি রাস্তায় পৌঁছে আমি আটকে গেলাম কখন বাস চলবে কেউ জানেনা তবে চলবে এটা সবাই বলছে কি করি সাথে টাকাকড়ি বিশেষ নাই নাই বললেই চলে হেড-অফিসের বড়বাবুরা অনেক বকাবকি করলেও তাঁদের দয়ায় দুপুরের খাওয়াটা ভালই জুটতও সেই কারণে মোটামুটি বাসের ভারা হলেই চলে-যেত  
সেদিন হঠাৎ দুর্যোগের জন্য তৈরি ছিলাম না অনকক্ষন বাসে বসে থাকলে যা হয় আমার বাজেট ফেল করতে শুরু হল আস্তে আস্তে আমার বাড়ি ফেরার বাস ভাড়াতেও হাত পরে গেল মনে ভাবলাম একবার হেড-অফিস যেতে পারলে অসুবিধা কি কারো কাছে কিছু টাকা চেয়ে নিলেই হবেক্ষন এই বলে মনকে সান্ত্বনা দিলাম  
শেষে বিকেল ৫টা নাগাদ বাস চলতে শুরু করলো আমিও বাসে করে চললাম কানপুর ওটাই হল মারাত্মক ভুল বাস কানপুর ঢোকার পর বুঝলাম কি মারাত্মক ভুল করেছি আর আমার সামনে ঠিক কতটা বিপদ বাস পৌঁছালো তখন প্রায় দশটা বাজে বাসআড্ডা আর কানপুর রেলস্টেশন পাশাপাশি বেশ-জমজমাট এলাকা বাসথেকে নেমে যে যার বাড়ি চলে গেল আমি বাসআড্ডাতে বসে রইলাম আমি ঠিক কতটা হতাশ হয়েছিলাম বোঝানো মুশকিল অনেকে বলবে সাথে-কিছু বেশি টাকা রাখলে ক্ষতি কি ছিল আমি বলিবন্ধু সেটাই তো সমস্যা অতটা যদি জ্ঞান সেদিন থাকতো তবে অনেক কিছুই তো না হওয়ার ছিল 
যাই হোক দেখলাম সামনে এক খাওয়ার হোটেল পকেট হাতরে বুঝলাম হয়ে যাবে মাথায় বিরাট চিন্তা রাতটা কোথায় কাটাবো হিসাব করে বুঝলামবস্ রাতে হোটেলে ঘড় ভারা করার টাকা তোমার নাই সুতরাং পাশেই রেলস্টেশন সেখানে থাকবে থাকার সমস্যার সমাধান করে বুঝলাম যা আছে রাতের খাওয়াটা ভালই হবে সময় নষ্ট না করে আমি পরটা আর আলুদ্দম খেলাম সাথে আচার পেঁয়াজ ফ্রি খাওয়া শেষ হতে বেশ সময় নিলো কারণ করার কিছুই ছিল না টাইম পাশ ঘড়িরকাঁটা ঘুরেই চলেছে আশেপাশের দোকান বন্ধ হতে শুরু হল আমি যে রাস্তার হোটেলে বসে ছিলাম সেটাতেও বন্ধ হওয়ার তোরজোড় শুরু হল যিনি ক্যাশে বসে ছিলেন তিনি তল্পিতল্পা গুটিয়ে ভেতরে চলে গেলেন দোকানে শুধু কয়েকজন মানুষ যে রান্না করছিল আর যারা পরিবেশন করছিল কিছুক্ষণ পরে যে রান্না করছিল সেও চলে গেল বাকি শুধু তিনজন মানুষ সকলেই অল্পবয়সী যুবক একজন বয়সে একটু বড় হয়তো বা ২১ অথবা ২২ আমার সমবয়সী অন্য দুজন ছোটো তারা সব টেবিল চেয়ার ধুয়ে গুটিয়ে ফেলছে আমি তবু বসে আছি দেখে আমার সমবয়সী ছেলেটি আমাকে হিন্দিতে জানতে চাইলো আমার অসুবিধা টা কি
আমি তাদের বললাম ঘটনাটা কি আমি এটাও বললাম আর্থিক সংকটের কথা এটাও জানালাম কোনও সমস্যা নাই রেলের বিশ্রাম ঘড় তো আছেই তখন কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তিনটে ছেলেই বাঙ্গালী মেদিনাপুরে দেশ গ্রামের ছেলে এখানে খাওয়া থাকা ফ্রি মাসে মাসে দেশের বাড়িতে টাকা পাঠায় মালিকটা ভাল খাওয়া থাকার অসুবিধা নাই বড় ছেলেটির নাম দুলাল তারা বলল আমি চাইলে রাতটা তাদের সাথে কাটাতে পারি
আমার কি অসুবিধা ? তারা হাঁড়ি কড়াই থালা গ্লাস সব পরিষ্কার করে স্নান করে খেতে বসলো আমি তাদের সাথে গল্পে মজে গেলাম রাত প্রায় ১টা বাজে এবার শোবার যোগার বিছানা বলতে চট নিচে পাতার জন্য চট গায়ে ডাকার জন্য চটের বস্তা দোকানের সামনে খাওয়ার বসার যায়গা পরপর কয়েকটা টেবিল যোড়া দিয়ে তার উপর চটের বস্তা পেতে দেওয়া হল কয়েকটা বালিশও দেখলাম রাজকীয় ব্যাপার সেখানে শুয়ে পরলাম ওদের সাথে চটের বস্তা ঢাকা দিয়ে অনেক গল্প হল আমি তো শুধু শুনি সমস্যা কি ? পরদিন ওরা ভোরে উঠে কাজ শুরু করলো তখন প্রায় পাঁচটা বাজে আমিও উঠে পরলাম চোখে মুখে জলদিয়ে দেখি চা তৈরি সাথে গরম পরটা সবাই খেলাম এরপর যতবার কানপুর গেছি দুলালের সাথে দেখা অবশ্যই করেছি হাতে সময় থাকলে দুদণ্ড সময় কাটিয়েছি ফ্রিতে চা খেয়েছি ………আজ সে দিন বহু দুরে হয়তো বা দুলাল

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমার গ্রাম

মাওবাদী