বদাগিরি


বদাগিরি
আমাদের লেগস বঙ্গীয় পরিসদের স্থায়ী  সেনাপতি চণ্ডী  সে আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটো কিন্তু একজন মানুষ হিসাবে সে আমার খুব প্রিয় বার দুয়েক সে বলেছে এবার আমাদের বাৎসরিক ম্যাগাজিনে কিছু লেখার জন্য কিন্তু নতুন লেখা আপাতত নাই পৌষালীর মতে বদা-গিরি গল্পটা দেওয়া যায় সেটাই ঠিক করলাম লেখাটাই আর একটু গুছিয়ে লিখতে বসলাম
সর্বপ্রথম সকল কে জানাই শুভ-বিজয়ার আন্তরিক অভিনন্দন শুভেচ্ছা আশাকরি সবাই ভালো আছেন ভাল থাকবেন
সময়টা ছিল গত জুলাই মাস চারদিকে -বোলা নিয়ে আতঙ্ক সকলেই শুধু অফিস আর বাড়িতে সীমাবদ্ধ লেগসে যাদের এক অন্যতম কাজ ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো তারাও শুনেছি ইদানীং ঘড় ও অফিসের বাইরে পা রাখছে না সব রেস্টুরেন্ট মালিকের মাথায় হাত খদ্দের নাই এক কথায় লেগসে সবাই ভিরমি খাচ্ছে -বোলা নিয়ে আমিও সকলের সাথে সমান তালে লাফিয়ে চলেছি তবে আমার কারণটা সকলের থেকে একটু ভিন্ন চাকরিটা আমার খুব প্রিয় এবং সেটা বাঁচিয়ে রাখতে ও প্রায় সারে তিনশত মানুষকে সুস্থ রাখতে আমাকে একটু চাপ নিতেই হবে ।
এখানে অনেক ছুটি আর অদ্ভুত ভাবে নাইজেরিয়ানরা ছুটি গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঠিক কি ভাবে শুক্রবার বা সোমবার করে সেটা আমি গত দুদশক এই দেশে বাস করে বুঝিনি আবার যদি কোন ছুটি শনিবার বা রবিবার হয় তবে সেটা সোমবার ছুটি হয় এবার ঈদ ছিল মঙ্গলবার কিন্তু কি ভাবে সোমবার হল বুঝলামনা যাইহোক এতে আমার ভালই হয় ছুটি পাওয়া যায় এবারও শনিবার থেকে মঙ্গলবার ছিল ঈদের ছুটি
সে যাই হোক শনিবার থেকে লাগাতার চারদিন ছুটি ঈদ উপলক্ষে সোমবার রাতে আমার এক দাদা পিটার-আবু-চক্রবর্তী আমি একসাথে ছিলাম গত তিনদিন বাড়িতে বসে খুব বোর হয়েছি সোমবার ঠিক হল আর না আগামী কাল সকালে আমরা কোথাও না কোথাও যাবই কেউ আমাদের বাঁধিয়া রাখতে পারবেনা বাঁধন হীন লাগাম হীন বেপরোয়া আমি এভাবে ভাবতেই পারি কিন্তু সংযত আবুদা এতটা হাঁপিয়ে উঠেছে যে সে আমার উদ্দেশ্যটাকে স্বাগত জানল এবার যে গল্পটা শোনাবো সেটা ছোট্ট একটু বাঁধনহীন ভাবে ঘুরে আসার গল্প কয়েকটা ঘণ্টার গল্প

তখন প্রায় রাত ৮টা বাজে আমি আমার চালক মিঃ রাফুবাবা কে ফোন করলাম বিনয়ের সাথে আগামীকাল সকাল দশটায় আসার অনুরোধ করলাম
আমি , আবুদা ছাড়া আমাদের অপর এক বন্ধু  এখন একা থাকে তাকে ও ফোনে আমাদের হাড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যের কথা জানালাম যদি সে রাজি থাকে তবে আমাদের সাথে যেতে পারে সেও সাথে সাথে রাজি সে আবার সিলেটের মানুষ আগে পিছু না ভেবে কাজ করেনা তবু সেও রাজী
ঠিক হল আগামী কাল মঙ্গলবার সকাল দশটায় আমি আবুদা তৈরি হয়ে আমার বন্ধুকে তার বাড়ি থেকে তুলে কোথাও যাব আমার বন্ধু বারকয়েক জানতে চায়নি তা নয় তবে আমাদের কাছে কোনও উত্তর ছিলনা
এই প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় আবুদা এআমার বন্ধুর একটু পরিচয় দিই
আবুদা একজন উৎকৃষ্ট মুসলিম আমাদের দেশের ৫০ শতাংশ মুসলিম যদি আবুদার মত হতো তবে পাজি রাজনীতিবিদরা  অনেকে রাজনীতি ছেড়ে চাষ করতো স্বাধীনতা সংগ্রামির ছেলে আবুদা আমি যদিও একই কলেজের ছাত্র কিন্তু আবুদা আমার থেকে বছর চারেক সিনিয়র হলেও আমরা বন্ধু আবুদা আমাদের পরিবারে সন্মানিয় ব্যক্তি ভালবাসার জন আবুদা একবার লেগসের দুর্গাপূজা পরিচালনা করেছেন যদিও আমি শুধু অষ্টমীতে অঞ্জলি দিই কিন্তু আবুদা চারদিনই অঞ্জলি দিতে আসেন বলে জানি আমাদের কলেজে একসময় সরস্বতী পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আবুদা মানুষ আবুদাও অনেক সুন্দর সৎ বুদ্ধিমান  তবে অনেক কথা বলতে ভালবাসেন ঠিক আমার উল্টো এই ব্যাপার আবুদা আমার স্ত্রীকে বেশি পছন্দ করেন কাড়ন দুজনেই অনক বেশি কথা বলেন
আমার অন্য বন্ধু আমার থেকে বছর দশেকের ছোটো সিলেটের মানুষ সোজা কথা সামনে বলে পছন্দ অপছন্দ বোধ অসীম সেও কথা বলতে ভালবাসে তবে পছন্দের মানুষ হলে খুব একটা কাউকে পরওয়া করেনা তবে আমার মতো বেপরোয়া নয় বুদ্ধিমান , সংযত মানুষ ক্ষতিকরা পছন্দ করে না যতক্ষণ কেউ ওর লেজে পা না দেয় বলা যায় সর্ব গুন সম্পন্ন মানুষ । আমরা ভাল বন্ধু
কোথাও বেরাতে যাবার আগে একটা পরিকল্পনা লাগে লাগে কিছু গোছগাছ কিন্তু হাড়িয়ে যেতে সব লাগেনা সেই রাতটা বেশ গল্প করে কাটলও খাওয়ার শুতে গেলাম প্রায় রাত একটায়
আবুদা খুব ভোরে ওঠে কেন জানিনা আমরা রবিবার বা ছুটির দিন সকাল ৯টার আগে উঠিনা ৯টার পর কাজের লোক আসে আবুদা কিন্তু সেই ভোরে উঠে নিজেই চা বানিয়ে খায় সেদিনও কোন ব্যতিক্রম হয়নি আমি যথারীতি ৯টায় উঠে কিছু ব্রেকফাস্টের যোগার করলাম যতদূর মনেপরে পাউরুটি আর রসগোল্লা আবুদাকে ঈদে খাওয়ানোর জন্য কাজল রেখে গেছিল সাবধান করেছিল যাতে আমি ঈদের আগে না খুলি অনেক গুলো ছিল আমাদের খাওয়ার পরও দুটো বেশি ছিল তারপর চা খেয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি সাথে নেওয়া হল হলদি রামের দু প্যাকেট মুড়ি এক বোতল জল সাথে কিছু নাইরা বা এদেশীয় মুদ্রা
চালক এসে গাড়ি তৈরি করে জানিয়ে দিতেই আমি আবুদা যাত্রা শুরু করলাম তখন প্রায় ১১টা আমার অন্য বন্ধু পরিতোষকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হল তৈরি থাকতে পরিতোষের বাড়ি পৌঁছলাম সারে এগারোটা নাগাদ সে তৈরি ছিল আবার যাত্রা শুরু আমি চালকের পাশে আবুদা পরিতোষ পিছনে পরিতোষ আমার পিছনে আর আবুদা চালকের
এবার প্রশ্ন কোথায় যাব ? আমি বলি চলো বদা গিরি বীচ ২১ বৎসর লেগসে আছি কিন্তু কখনো বদা গিরি বীচ দেখা হয়নি শুনে আবুদা চমকে ওঠে বলেবলিস কি ” ওখানে যেতে পাসপোর্ট লাগে আমি বলিচলো তো আজ নিয়ম ভাঙ্গার দিন পরিতোষ বলেআমিও যাইনি কখনো এটা ঠিক বর্ডার এলাকা তবে কি আর হবে কিছু নাইরা লাগবে এইতো আমরা যখন চালককে বল্লাম বদা গিরি কিছুটা আঁতকে উঠলো বলেপাসপোর্ট আছে আমি বলি নাই বলে “ THEY NEED PASSPORT” আমি বলিচলো দেখাযাবে
চালক একবার আমাকে দেখে গাড়ি বদা গিরি EXPRESS WAY তে তুলে দিল দারুণ রাস্তা দশ লেনের আপ ডাউন কংক্রিট রাস্তা পাশে তৈরি হচ্ছে মেট্রো অনেকটা দুবাই মেট্রো মডেল গাড়ি ছুটছে পেছনের সিটে আবুদা পরিতোষ কথা বলেই চলেছে বিষয় বোম্বে এনটাফিল থেকে ধনে-খালি খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি করছে তবে আমি ওদের ফলো করছিলাম না মনদিয়ে গান শুনছিলাম আর রাস্তার পাশর লোকজন ঘরবাড়ি আর ব্যবসার রকম দেখছিলাম রাস্তা দেখে বেশ খুশি ছিলাম যদিও লেগসের রাস্তা সাধরন ভাবে বেশ ভাল আমরা এদিকে কখনো আসেনি আগে তাই প্রায় নতুন স্থানে ভ্রমণের স্বাদ ছিল আমার মনে মাঝে মধ্যে আবুদা আমি কথা না বলার জন্য বকেছেন প্রায় ৪০মিনিট পর চালক কে বললেন গানটা বন্ধ করতে তার বক্তব্য ওটার জন্যই আমি কথা বলছি না
যাইহোক ব্যাপারটা তা নয় আমি এই বদা-গিরির ব্যাপারে সামান্য পড়াশোনা করে কিছু জেনেছি বলে আমার আকর্ষণটা বেশি আমি ব্যাপারে হয়তো ডুবেছিলাম কিন্তু যখন বুঝলাম অন্য সহযাত্রী অবজ্ঞা অনুভব করছে তখন তাদের আলোচনাতে মননিবেশ করলাম  
পরিতোষ এবার দেশে গিয়ে মুর্শিদাবাদের এক গ্রামে গিয়েছিল কোন বিয়ের কনেযাত্রী হিসাবে এবং সে দেখেছে আজ গ্রামগুলোর কি হাল গ্রামটা আমি চিনি যা বলছিল সব সত্যি আমি জানি আর আমাকেই সাক্ষী মানছিল আমি শুধু মাথা নাড়ে সম্মতি জানাচ্ছিলাম আবুদা তাতেও খুশি নন বলেনসামনে বসে মাথা নাড়লে পরিতোষ কিভাবে বুঝবে তোর মতামত সত্যি কথা ওতো আমাকে দেখতে পাচ্ছে না আমি বুঝলাম আমাকে বিষয়টা পাল্টাতে হবে
আমি বললামপরিতোষ তুমি কি বদা-গিরির ব্যাপারে কিছু জানো”? আমি জানি বলবেনা আমি বললাম তোমরা যদি জানতে চাও আমি যেটা জানি বলতে পরি
আবুদা বললেনযদি পারিস তো চুপ করে না থেকে সেটা বললেই তো হয়
আমি বলি তবে শোনো আমরা চলেছি বদা-গিরি বীচ এটা খুব সাধরন স্থান নয় এটা (COAST) প্রোজেক্ট আফ্রিকার ৯টা দেশে ৯টা স্থানে সমুদ্রতীরে এই প্রজেক্ট শুরু করে UNEP UNWTO এবং UNIDO এই প্রোজেক্ট  দেখাশোনা করবে ঠিক হয় GEF ফান্ড দিয়েছিল UN এর ৯টা প্রোজেক্টের একটা নাইজেরিয়ার বদা-গিরি বীচ রিসোর্ট ১৯৯০ সালে এই প্রোজেক্ট সুরু হয়েছিল আজ কি অবস্থা গিয়ে দেখলে বুঝবো
COAST এই বদা-গিরিকে নির্বাচন করেছিল কাড়ন বদা-গিরি একটা টুরিস্ট স্পট ছিলই বদা-গিরিতেই সর্ব প্রথম ইংরেজ উপনিবেশ তৈরি হয় কাড়ন প্রথম ইংরেজ নাবিকের নৌকা বদা-গিরিতেই ভিড়েছিল বদা-গিরি শুরু হয় প্রথম স্লেভ ট্রেডিং
ইংরেজ দের দৌলতে বদা-গিরির ইতিহাস লেখা শুরু হয় ১৪২৫ সালে এটার তারা নাম দেয় COAST OF GBEREFU এই অঞ্চলের মানুষ তখন মাছ ধরতো চাষ করতো  এবং এরা সমুদ্র জল থেকে নুন বানাতে জানতো এই মানুষরা কোন এক প্রকারে রাত্রে সেচবাতি (মশাল নয়) জ্বালাতে জানতো বলে জানা যাই
এই অঞ্চলে এক রাজা ছিল তার নাম ছিল AGBEDEH যে এই বীচের কাছেই থাকতো সে ছিল খুব নামী কৃষক মানুষ জন তার চাষবাস দেখতে আসতো দুর থেকে এই অঞ্চলের আদি ভাষার নাম OGU এই প্রদেশের নাম OGUN এখানে একটা সুন্দর নদী আছে যার নাম OGUN এই OGU ভাষাতে GREME মানে চাষি AGBEDEH এর চাষবাস মান AGBEDEHGRAME এর থেকে নাম হয় AGBADARIGI পরবর্তী কালে ইংরেজ উচ্চারণ সুবিধার জন্য নামকরণ করে BADAGRY বা বদা-গিরি i
সে সময় ঘন অরণ্য ছিল আফ্রিকার বুকে কিন্তু এই OGUN নদীর দুকুলে মানুষের বসবাস দানা বেঁধেছিল বিভিন্ন ভাষার মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বসতি স্থাপন করেছিল OGUN নদীর দুকুলে অনেক গোষ্ঠী ছিল ছিল অনেক রাজা এদের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকতো সেসময় বদা-গিরি তে জনবসতি ছিল ঘন যে করনে স্লেভ ট্রেডিং এখানেই দানা বেঁধে উঠেছিল প্রসঙ্গত বলে রাখি পশ্চিম আফ্রিকাতে এত ঘন জঙ্গল ছিল বলে জানা যাই যে দিনের বেলা সূর্য কিরণ পৌঁছাত-না যে কারনে খুব বড় গাছপালা ছিল এই অরণ্যে এখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা সামাজিক নিয়ম কানুন ছিল মজার যেটা এদেশের লেখক দের বই পরলেই জানা যাই
ইংরেজ স্লেভ ট্রেডিং শুরু করে ১৭০০ সালের পর তার আগে তারা কিন্তু মিশনারিস দের দিয়ে শুরু করে ধর্মান্তকরন কাঠের ব্যবসা ঘন অরণ্যে ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে আফ্রিকান মানুষরা থাকতো ইংরেজদের কথা শুনত
কিন্তু স্লেভ ট্রেডিং ইংরেজদের অনেক আগে ১৪৭৩ সালে পর্তুগীজরা শুরু করেছিল সেচবাতির আলো এদের উপস্তিথি জানিয়ে দিত গভীর জঙ্গলে ঘন অন্ধকারে আর তখন পর্তুগীজরা এদের জাল ফেলে ধরত
১৫০০ সাল নাগাদ নতুন পৃথিবী তৈরি হওয়া শুরু হয় ১৫০০ সালের আগে ৫০জন কে চালান করা হত প্রতি বছর ১৫০০ সালের পর সেটা ৫০০০ হয়ে যায় প্রতি বছর ১৬০০ সালে ১১০০০ স্লেভ বিক্রি হত প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ১৭৮৩ সালে এক ইংরেজ লিখেছেন তিনি ৫টি ফ্রেঞ্চ জাহাজ ৪টি পর্তুগীজ জাহাজ দেখছেন বদা-গিরি স্লেভ পোর্টে এই বদা-গিরিতে প্রথম স্লেভ পোর্টে তৈরি হয়
আফ্রিকার প্রথম কোঠা বাড়ি ১৮৪৫ সালে তৈরি হয় বদা-গিরিতে নাইজেরিয়ার প্রথম স্কুল ১৮৪৩ সালে তৈরি হয় বদা-গিরি তে
এখন বদা-গিরি ছোট্ট একটা জনবসতি যেখানে ২লক্ষ মানুষ বাস করে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন নাইজেরিয়া ভাষার এখানে কিছু মানুষ আজও দেবতা নির্মাণ করে হিন্দুদের মত পূজা করে এই দেবতার নাম VOODOO দেবতার ধরন পূজা পদ্ধতি অনেকটা কামাখ্যা পূজার সাথে মেলে
কথা বলতে বলতে অনেক আলোচনাও চলছিল হঠাৎ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লো বুঝলাম অনেকটা চলে এসেছি শহুরে ভাব আর নাই তার মধ্যেও বেশ জমজমাট মনে হল যায়গাটা লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি উর্দি পরা এক মানুষ আমার চালককে জানালার কাঁচ নামাতে বলছে বুঝলামব্যাপার খারাপ ।
বুঝলাম ইমিগ্রেশনের লোক কিন্তু তারতো যাওয়ার পথে থাকার কথা নয় ফেরার সময় দেখা হওয়ার কথা ছিল যাহোক সময় ঘাবরে গেলে বিপদ চালক জানালার কাঁচ নামাতেই সে বলে পাসপোর্ট আমি অবাক হয়ে বলিআঃ….WHY PASSPORT” সে বলে “WE LIKE TO SEE YOUR PASSPORT” আমি বলিআঃ I DON’T KNOW OGA…PASSPORT IS AT HOME” সে বলে “YOU COME DOWN”
তার পর আবুদা পরিতোষ ওদের কাছে কারেন্ট আর.পি কপি তো ছিলই না তার উপর পুরনো expaired আর.পি কপি ওর হাতে ধরিয়ে দিল লোকটা প্রথমে বুঝতে পারেনি ওগুলো expaired কপি দেখে ফিরে দিচ্ছিল হঠাৎ আবার কি ভেবে যখন বুঝল ওগুলো eparied কি ভয়ংকর রেগে গেল অনুমান করা মুস্কিল আমি কিন্তু আগেই ওদের বলেছিলাম ওগুলো না দিতে বিপদ শতগুণ বেরে যাবে কিন্তু সেটাই করলো লোকটা ভয়ংকর লাফালাফি করতে শুরু করলো আর তাই দেখে দুজন পুলিশ অটোমেটিক একে 47 নিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ঠিক আমরা যেন টেররিস্ট
পাশে চালক চুপ করে বসে আছে আবুদা ভয় পাওয়ার মানুষ নয় কখনো রেগে যায় না মৃদু ভাষী তিনি চুপ করে বসে আছেন প্রায় গোল হয়ে চঞ্চল পরিতোষ ভয় কাকে বলে জানেনা দুঃসাহসী সে প্রথম গাড়ির দরজা খুলে এমন ভাবে নেমে গেল যেন এখনি যুদ্ধ শুরু হবে আমি আবুদা বললামবস্ এবার নামতে হবে আবুদা গাড়িতে বসেই থাকলো আমি নামলাম পরিতোষ লোকটাকে এমন ভাবে প্রশ্ন করছে যেন সে কিছুই জানে না বলেআমরা নতুন এসেছি শুনেছি একটা বীচ আছে আগে সেখানে যাচ্ছি তোমরা মানা করলে যাব না
সে বলেতুমি পুরানো আর পি কপি কেন দিলে
পরিতোষএটাই আমার আছে নতুনটা বাড়িতে
ততক্ষণে গানম্যান দুটো আমার গাড়ি ফুটপাথে তুলেছে তারাও এসে বোঝার চেষ্টা করছে ব্যাপারটা
পরিতোষবলো কি হবে do you like to kill us it is a mistake no body above mistake”
সে বলেতোমরা বাড়ি গিয়ে নিয়ে এসো
পরিতোষ বলে “that is not possible you can tell us any alternative”
সে বলে “ ok then pay fine”
বুঝলাম লাইনের লোক পরিতোষ বলে “yes we will pay fine how much”
সে বলে “pay to officer”
এতক্ষণ আমি আমার মাথাটা কখনো ডাঁয়ে বাঁয়ে অথবা সামনে পিছনে নাড়াচ্ছিলাম কিন্তু এবার ওকে বললাম “you go and ask him naaa”
তখনো আবুদা গাড়িতেই বসে ভদ্র লোক আমাদের একটা জিপ এর কাছে নিয়ে গেল মেঘলা আকাশ যে বিশাল এক মানুষ জিপের পিছনের সীটের প্রায় সবটুকু জুরে বসে আছে । ভদ্র লোক তাকে নিজের ভাষায় কিছু জানিয়ে তার হাতে expaired আর পি কপি দুটো তুলে দিলেন চলে গেলেন আমি পরিতোষ ঠিক ওর সামনে পরিতোষ প্রথমে বলে “hallo sir, how are u. I hope all fine” লোকটি তারদিকে চেয়ে দাঁত বারকরে হেঁসে বলে”yes yes thank god all fine”
পরিতোষ বলে”but ur man insulting me too much. I never expect it” আমি তো অবাক কেউ আমাদের অপমান করেনি
লোকটি হতবাক বলে “he insulted you…aha…how manage….he can not insult you”
পরিতোষ এবার আমাকে সাক্ষী-মানে বলে “ask my friend….i tell him garruf (একজন খুব পপুলার সিনেমা স্টার, যাকে বলে এদেশের অমিতাভ)is my friend….but he said it no mean any thing….is it not insult” আমিও মাথা নাড়ি আর মিঃ গরিলা বলে”is that so…..aha….how he can say that…..but r u friend of garruf seriously…..” সাথে সাথে মানিব্যাগ খুলে পরিতোষ তার garruf এর একান্তভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ফটো দেখাল বলে “see…see” মানুষটি ভীষণ খুশি হয়ে বলল “sir…sorry…sorry….he should not say that….but where u r going here….”সে  বলে “sir u sit here…no problem” তিনি সামান্য সরে গিয়ে ওকে বসতে বলল পরিতোষ না বসে বলে “no problem sir….u r most welcome to my home…come one day…take my card ….but please call me before u come….” এই বলে তার কার্ডটা ওর হাতে দিল তার পর বলে “now what we should do….”
মানুষটি বলল “just pay some amount and go…”
পরিতোষ এতো পাজি বলে “ aha…I just come with my friend…Mr Ray…he will give u some thing….” আমি এবার এগিয়ে যাই কারণ তাছাড়া আমার অন্য কি করাচ্ছিল ?
আমি বলি “ sir we don’t have much…please keep it..” বলে ১৫০০ নাইরা তার হাতে দেওয়ার চেষ্টা করতেই সে বলে “what is there…” আমি মুঠি খুলে দেখায় সে তখন চোখ মুখ কুঁচকে আমাকে বলে” this thing…..r u mad …..” আমি মানি ব্যাগ খুলে দেখায় বলি “see I have only 7000naira….and we have to go beach…so oga forgive us…” ততক্ষণে আবুদার প্রবেশ পরিতোষ পাশেই এক gun man কে কিছু বুঝিয়ে চলেছে আবুদা আমার পাশ এসে বলেসর….আমি দেখছি..” বলেই মিঃ গরিলাকে এক বিরাট স্যালুট দিল আমার হাত থেকে মানিব্যাগ টা নিয়ে নিলো i
বুঝলাম আবুদা আমাকে সরিয়েদিল কারন আমি রেগে গেলে মুসকিল হতে পারে এটা আবুদা জানে আমি একটু পাশে অন্য গানম্যানটাকে ধরলাম ওকে প্রথমে একটা সিগারেট দিলাম কারন এখানে পাবলিক প্লেসে ধুমপান নিষেধ পরিতোষ বললকরছো কি এবার তো জেলে যাবে আমি বলিপুলিসটাইতো ধরিয়েছে ভালো কোরে দেখো সাথে সাথে পরিতোষ অন্য গানম্যানটাও এসে সিগারেট ধরালো আমার হাতে সিগারেট থাকলে আত্মবিস্বাস অনকটা বেরে যায় আমি গানম্যান দুটোর মস্তিস্ক ঝাঁকাতে শুরুকরলাম তাদের বোঝাতে শুরু করলাম দেশটা কত সুন্দর আর তোমার বস্ কত বাজে আমি তার পোশাকের মুল্য কি দেশের সে কতটা ক্ষতি করছে বোঝাতে শুরু করলাম আমি বাঙ্গালী লোককে জ্ঞান দেওয়া আমার জন্মগত অধিকার সুতরাং যতক্ষন না সে ফেটে যায় আমি জ্ঞান দেবই হঠাৎ আবুদা এস বলে চল হয়েছে আমি বলিদাদা ওর একটা কার্ড নিতে হবে না হলে আবার ধরবে আবুদা বলেদাঁড়া বলে দেখি আমি তখন গানম্যানটাকে বলিদেখ আমাদের কাছে তো আর কিছুই নাই সব তোমার বস্ নিয়েনিল সে ভীষন ভাবে অস্বিকার করল বললনা আমাদের বস্ নয় আমি বুঝলাম কাজ হয়েছে সে বললতবে নাইরা ফিরিয়ে আনতে পরবো না আমি বলিঠিক আছে ফিরিয়ে আনতে হবে না কিন্তু ওকে বল যে লিখে দেবেআমরা তোমার বন্ধু আমাদের যেন কেউ না ধরে
এরা কতটা সহজ আমি জানি ছেলেটি ধপধপ করেগিয়ে ওর পাশে বসে একটা কাগজ পেন সেই গরিলাটাকে দিয়ে বলললেখ যেন ওদের আরকেউ না ধরে লোকটা একটু ইতস্ততঃ করছিল বলে আমরা তিনজন গিয়ে বললাম আমাদের পকেট খালি দয়া করে লিখে দিতে আবাক কান্ড সেই গরিলা লিখে দিল “ they are our friend. Do not disturbe” নিচে নাম লিখেদিল
হতে পারে কিছু অন্যায় তারা করলো নিয়ম তারা ভাঙ্গলো সে তো সব দেশেই হয় আমি এমন একজনকে জানি যিনি সব সময় zurikh থেকে barlin রাতের ট্রেনে সাধরন টিকিট কেটে কুপে (যেখানে শোবার ব্যবস্থা থাকে) যান ভারতবর্ষেও এই ঘটনা ঘটে কিন্তু আজকের ঘটনার জন্য আমরাও কম দোষী ছিলাম না দ্বিতীয়ত এখান কার মানুষ আজও ভীষণ সরল সাদা সিধে তা না হলে কখনোই তারা লিখে দিত না আমরা তাদের বন্ধু যাহোক আমরা গাড়িতে ফিরে গেলাম ঠিক যেন বিশ্ব জয় করেছি চালক গাড়ি নিয়ে আবার এগিয়ে চলল i
আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে সেই দশ লেনের নতুন রাস্তা অনেক আগেই শেষ হয়েছে রাস্তার দুধারে শহুরে ভীর আর নাই শুরু হয়েছে বনভূমি অবুদা বার কয়েক বললেন সবুজ দেখলেই মনটা অনেক শান্ত হয়েযায় আসলে আমি আবুদা গ্রামের মানুষ তাই হয়তো প্রকৃতির সাথে আত্মীয়তা এত নিবির তবে রাস্তা মাঝে মধ্যে খারাপ যানজট তৈরি হয়েছে মাঝেমধ্যে সব কিছু পেরিয়ে শেষমেশ আমরা ogun নদী পার হলাম হাতে সময় কম নদী দেখার সময় নাই কিছু পরে এলো বদা-গিরি মোর এখানে একটা রাস্তা চলে গেছে বদা-গিরি শহরের ভেতর আমরা এগিয়ে চললাম সোজা মাইল খানেক যেতেই বুঝলাম বীচের হাওয়া বইছে চালক রাস্তা ক্রস করে গাড়ি নামিয়ে দিল বেলাভূমিতে সামনে suntan বীচ অনেকটা লম্বা প্রাচীর গেটে সিকিউরিটি গাড়ির জন্য ভারা লাগবে গাড়ি রাখার বেশ বড় ভাল যায়গা গাড়ি রেখে আমরা তিনজন বীচের দিকে -গোলাম এবার দেখলাম লোহার গ্রিল দিয়ে বীচটা ঘেরা যেমন প্রাইভেট বীচ হয় বীচে যেতে আবার গেট তাতে টিকিট হাতে সিকিউরিটির লোক গেট পার হলেই বীচ শুরু আর সামনে অসীম জলরাশি
প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি সমুদ্র আটলান্টিকের কোল ঘেঁষে নাইজেরিয়ার অবস্থান যার একটা দিকে শুধুই আটলান্টিক মহাসমুদ্র উচ্ছল উদ্দাম আটলান্টিক তারই কোলে সবুজ প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, পাখির ঝাঁক, জেলেদের উচ্ছ্বাস নিয়ে তুমি আফ্রিকা আমার সব থেকে প্রিয় মহা-মানুষ রবীন্দ্রনাথ আর তার সবথেকে প্রিয় সৃষ্টি কবিতা আফ্রিকা আফ্রিকা আসার আগে কতবার যে পড়েছি আফ্রিকা তা বলা মুস্কিল তবে মনে আছে একটা সময় আমি পুরো কবিতাটা আবৃতি করতে পারতাম আজ সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশির পাশে দাঁড়িয়ে আমার খুব ইচ্ছা করছিল সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে আর দু হাত তুলে চিৎকার করে আফ্রিকা আবৃতি করতে আটলান্টিকের সমুদ্রসৈকত দীর্ঘ কিন্তু প্রস্থ খুব কম হয় সাগরে নোনা জল উথলে ওঠে তটরেখায় আছড়ে পড়ছে আমি আরব সাগর পারে পা রেখেছি দেখেছি বঙ্গোপসাগর দেখেছি ভারত মহাসাগর কিন্তু আমার মনে হয় আটলান্টিক অনেক বেশি বেপরোয়া উচ্ছল অশান্ত ছোট-বড় ঢেউ একের পিঠে অপর ঢেউ আছড়ে পরছে  সব মিলে নয়নাভিরাম এক সৌন্দর্যের জগত সৃষ্টি হয়েছে অনন্য এক সৌন্দর্য তার সাথে জলের শব্দ বা নিনাদ  যেন প্রতি মুহূর্তে এক যুদ্ধ ঘোষণা করে চলেছে বড় অদ্ভুত অনুভূতি
এখানে সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে সুযোগ কিন্তু সে পরে কখনো হবে দৃষ্টিকে একটু সমুদ্রের ভেতরে নিয়ে যাও দেখতে পাবে ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকার বহর সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য বিশেষ করে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এর আবেদন অন্য রকমের লিখে বোঝাতে পরবো না প্রকৃতির সৃষ্টি কে প্রকাশ করবে কে জন ? তুমি না আমি ? শুধু অনুভব করা যায় ভাই তার বেশি নয়
শেষ বিকেলের রোদের আলোতে বেলাভূমিতে উত্তপ্ত নাই পায়ের নিচে বালির খেলা বালুর ওপরে সূর্যের আলেয়ায় চোখের দৃষ্টি যদি চিক চিক করে ওঠে ফিরে এসো তটে কালো মানুষের ছড়াছড়ি ছোট বড় মোটা পাতলা নানান সাইজের মানুষ সবাই আনন্দে বিভোর আমরাও দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেকটাক্ষন সাগরের পাশে দেখলাম তাকে অনেকটাক্ষন ধরে তারপর তিনজনে গুটিগুটি সৈকত ধরে হাঁটতে শুরু করলাম মনে পড়লো সেই দু-প্যাকেট মুড়ির কথা তিনজনে মুড়ি খেতে খেতে অনেকটা হাঁটলাম সাগরপারে এখানে পাশেই রয়েছে বিশাল বনভূমি লম্বা লম্বা গাছ মোট কথা, একদিকে  বনভূমি অন্যদিকে দূর আকাশ বিস্তীর্ণ সাগর পাশাপাশি দুটিরই স্বাদ মিলবে  এই সাগরচরে সাথে পাবে সমুদ্রের গর্জন আর পাখির কলরব
আর আছে রাত কাটানোর মতো নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা খুব কম ভারা এসি লাগানো ঘর মাত্র ২৫০০ নাইরা আছে জেনারেটর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা গাড়ি রাখার ভাল ব্যবস্থা বীচে আছে ভাল রেস্ট্রুরান্ট ছোট ছোট বাংলো টাইপ টিনের চালি-দেওয়া ঘড়গুলো সুন্দর করে সাজানো   বাইরে আছে বাগান বিভিন্ন ধরনের গাছ এই ছোট্ট বাংলো গুলোতে আছে ছোট্ট একটু আলাদা করে বসার ঘড় তার পর শোবার ঘর তাতে একটা ফ্রিজ এসি লাগানো শৌচাগার স্নানের ব্যবস্থা ২৫০০ নাইরাতে এর বেশি হয়না একজন মহিলা আমাদের ঘুরে দেখালেন উৎসবের দিনগুলোতে ভীর হয় তবে সাধরন দিনে ফাঁকা থাকে খাবার দোকান বার উৎসবের দিনে রাতে খোলা থাকে অন্যথায় রাত ৮টার পর খাবার পাওয়া মুস্কিল বনভোজনের বিশেষ ব্যবস্থা আছে
আর আছে নৌকা মাঝি মন চাইলে পকেটের জোর থাকলে ভাড়া কর নৌকা মাঝি সমেত ঘণ্টায় হাজার নাইরা আর হারিয়ে যাও অসীমে অনন্তে ওই সমুদ্রের বুকে
আমাদের মনের খিদে থেকেই গেল মনে এবার বাড়ি ফেরার পালা মনের সাথে অনেকটা লড়াই করে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরা গাড়িতে বসলাম চালক আমাদের নিয়ে ফিরে চলল আবার সেই বাস্তব জীবনে i
                                                                        -    সমাপ্ত   -

Comments

Popular posts from this blog

এক টুকরো গল্প

ছেলেবেলা

অমানুষ