অমানুষ
অমানুষ পর্ব ১
আমরা সবাই কম বেশি অমানুষ । এটা অবশ্য আমার দর্শন । নিজের উপলব্ধি । অনেকের
মত ভিন্ন হতেই পারে । কিন্তু আমার বিশ্বাস প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা অমানুষ লুকিয়ে
থাকে এবং জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমরা এই অমানুষকে ব্যবহার করি অন্য মানুষকে অন্যায় ভাবে
কষ্ট দেওয়ার জন্য । সে যাক । এনিয়ে ভেবে লাভ নাই । দিন বদলেছে । এখন মানুষের মধ্যে
মানবিকতা অবাক করে । অমানবিক মানুষের উপর আস্থা বেশি । সোজা হিসাব বাঁচার ক্ষমতা থাকে
বাঁচো অন্যথায় মরো ।
এই যখন উপলব্ধি ও জীবনের আদর্শ তখনও কিছু ঘটনা ঘটে যেটা মনের ছোট্ট এক
কোনে যে মানবিকতা এখনও মৃত্যু শ্বাস নিচ্ছে তাকে অযথা বিব্রত করে । এই ঘটনাগুলো আমার
মনে ভয়ংকর দুর্ঘটনার সমান । বিব্রত হই । মানসিক সমস্যা তৈরি হয় । মানুষের প্রতি ঘৃণা
বেরে যাই অনেক গুন । যেটা লিখতে বসেছি সেটা গল্প নয় । অত্যন্ত নির্মম হলেও ভয়ংকর সত্যি
একটা ঘটনা ।
সকাল বেলা চোখ খুলে দেখি এক বাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব টিভি তে ভাষণ দিচ্ছেন । নাড়ী-দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন । মনে হল একবার
পায়ের চটিটা খুলে টিভিতে মারি কিন্তু বৌ এর ভয়ে সেটা করলাম না কারণ টিভিটা ভেঙ্গে গেলে
কি হতেপারে সেটা আমি জানি । আমার পরিবারে রোজই নাড়ী-দিবস । নাড়ীই এখানে প্রধান । আমি
সামান্য মানুষ । এখানে সারা আকাশটাই নাড়ীদের । যাই হোক যেটা বলারছিল সেটা-বলি ।
ঘটনার সূত্রপাত শ্রীরামপুর মিনি
শহরে । মফস্বল শহর । বেশির ভাগই শিক্ষিত অমানুষের বাস । মোটা মাথা আর মোটা জীবন। এদের
সুখের হিসাব নির্ভর করে টাকার পরিমাণের উপর । যার টাকা যত মোটা তার সুখ তত মোটা । আমিও
এদের একজন । তাইতো মোরা সবাই মাথা মোটা । তার মধ্যে সামান্য সূক্ষ্মতা যদি কখনো ক্ষণিকের
জন্য ও বুদ্ধির দরওয়াজায় কড়া নারে বুঝতে পারি আমরা কোন নরকে বাস করছি । মনটা বলেই দায়
“ভাইরে একটু ভালভাবে বাঁচার চেষ্টা কর”। একথা মন বলেই দায় কারণ কষ্টটা তারই বেশি ।
আমরা বলি “চুপ । যত সব মূর্খের মত কথা । ভালভাবে বাঁচার জন্যই তো করেছি মোটা মাথা ।
মোটা টাকা চাই । বুঝিস না যখন চুপ কর”। বেচারা মন আবার ঘুমিয়ে পরে । সে যাক । আমি মনের
গলা অনেক আগেই আমি টিপে দিয়েছি । আমার সে সব বালাই নাই । আমি আমার মাথাটা বেশ মোটা
করে ফেলেছি । মাথার চারপাশে খুলিটাও বেশ শক্ত । অনেকটা ঝুনা নারকেলের মত । কানে দুটো
ফুটো ছিল । সেখান দিয়ে মাঝে মধ্যে ঐ মানবিকতার ডাক শুনতে পেতাম । আমার মনেরমানুষ জেগে
উঠত । সেও বহুকাল আর কাজ করেনা । সুতা-কলে খুব শব্দ । বছর-দশেক এখানে কাজ করলে কান
আর কাজ করেনা । আমি তো তিরিশ-বছর পার করেছি । এখন আমার কান আর কাজ করেনা । এখন আর শুনতে
পায় না । নেহাত কেউ চিৎকার করলে শুনতে পায়
। এর জন্য আমি বেশ গর্ববোধ করি কিন্তু ঝামেলা হল এই চোখ দুটোকে নিয়ে । নয়ন আমাকে বড্ড
জ্বালাতন করে । এই দাসত্ব থেকে মুক্তি নাই । যদি মুক্তি পেতাম তবে এই ভয়ংকর নোংরা কাহানীটার
জন্ম হত না ।
বহুকাল
আগে সমরেশ এই শ্রীরামপুর শহরে এসেছিল । তার আদি বাড়ি বর্ত্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার
কোন গ্রামে । মুসলমানের ভয়ে বাপদাদার সাথে জলপাইগুড়ি শহরে বাসা করেছিল বহুকাল আগে ।
পড়াশোনা করে শ্রীরামপুর কলেজে মাস্টারি করতে এসেছিল সমরেশ বহুকাল আগে । কলেজে বহু তরুণী
। এক তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সমরেশ । গোপনে বা সম্মতি
নিয়ে সে ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যর ফুটেজ ছড়িয়ে দেয়া মোবাইলে-ইন্টারনেটে
। আমার গল্পের সূত্রপাত এখানই ।
অবশ্য এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়
। একদিকে ভারতের রক্ষণশীল সমাজ অন্যদিকে কিছু অমানুষের অমানবিকতার চাপে বহু তরুণী প্রতারণার
শিকার হয়ে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও আত্মগোপনে
চলে গেছেন। একের পর এক প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়ছে গোটা ভারতবর্ষে ।
এই সমস্যা কে অস্বীকার করার উপায় নাই । মেয়েদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে
পরছে ফেসবুকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। অপকর্মের হোতারা ঘটনা ঘটিয়েই
ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা নিজেরাই মোবাইলের ব্লুট্রুথের মাধ্যমে সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে
দিচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে সংশ্লিষ্ট তরুণী এবং তাদের পরিবার । জননেতারা মেয়েদের সাবধান
হতে উপদেশ দিচ্ছেন । কেউবা পরামর্শ-দিচ্ছেন মেয়েরা যেন ছবি ব্যবহার না করেন । কিন্তু
কেউ বলেনা, যে এই অমানুষিক কাজ করছে তাকে মারো । যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় মারো । কেউ
বলেনা এই অমানুষদের বাঁচার অধিকার নাই কারণ তাতে সবথেকে বড় বিপদ নেতা ও নেতৃদের । কারণ
এই অমানুষদের বেশিরভাগ ই তাদের আপনজন । এই অমানুষদের ভীষন প্রয়োজন পার্টির জন্য ।
অমানুষরাই তো আজ পার্টি করে । তাদের বিপদ আপদে রক্ষাকরা রাজনৈতিক মোড়লদের জন্মগত
অধিকার ।
যাইহোক মুল গল্পে ফিরে আসি । ঐ মাস্টারমশাই
এর কর্মস্থান পরিবর্তন হয় । তিনি নিজের শহর জলপাইগুড়িতে ফিরে যান এবং খেলার ছলে শ্রীরামপুরে
তার পরিচিতদের ইমেইলে একটি ভিডিও ফুটেজ এবং কিছু স্টিল ছবি পাঠান সেই তরুণীর যার সাথে
এতদিন ছিল তার ভালবাসা । এই ভিডিও তে আছে তরুণীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের বেশ খোলামেলা
দৃশ্য । এই ছবি এবং ফুটেজ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। বেকায়দায় পড়া
তরুণীটি আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়।
গল্পটা এখানেই শেষ হলে মন্দ হতনা
কিন্তু সে গুড়ে বালি । মেয়েটির পরিবার শিক্ষিত এবং সচেতন হওয়ায় তারা ব্যাপারটা একটু
অন্য ভাবে চিন্তা করেছিল । প্রক্তনী নামের একটা সমাজসেবী সংগঠন আছে শ্রীরামপুরে । সেখানে
সকল সদস্য প্রাক্তন মানুষ । মেয়েটির কাকা যিনি এককালে জাঁদরেল আইপিঅস ছিলেন ঐ ক্লাবের
সদস্য । তিনি ব্যাপারটা ক্লাবকে জানান । ক্লাবের তৎপরতায় ইউটিউব ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন
সাইটে যোগাযোগ করা হয় ও ফুটেজটি প্রচার কিছুটা বন্ধ করা সম্ভব হয় ।
এরপর ক্লাব স্থানীয় পুলিশে অভিযোগ
আনে । শিকার মেয়েটির তরফে ক্লাব বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করে প্রতারক প্রেমিকের
বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এই ধরনের ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশই
তৎপরতা ছিল উৎকৃষ্ট মাপের । কিন্তু আজও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে-পারেনা । চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এই
ঘটনাটির পুরো ভিডিওটি ধারণা করা হয় এলাকার একটি আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে। এ প্রসঙ্গে
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আমরা ঘটনার প্রকৃত চিত্র বের করার জন্য তদন্ত কার্যক্রম
চালাচ্ছি এবং একই সাথে অপরাধীকে আটক করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে কিন্তু অপরাধী উত্তরবঙ্গের
এক শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য । পুলিশের ক্ষমতা নাকি একটা সীমার পর শেষ হয়েযায়
। সীমা অতিক্রম করারা জন্য রাজনৈতিক অনুমতির প্রয়োজন হয় । এরপর বলার কিছু নাই ।
অমানুষ
পর্ব
২
এই
গল্পের
সূত্রপাত আমার
বাসার
বৈঠকখানায় ।
আমাদের
পারিবারিক বন্ধু
শেখ
অবুবেকর । হ্যাঁ উনি
মুসলিম
। ঠিকযতটা মুসলিম
তিনি
ততটাই
হিন্দু
। অন্তত এটা
বলা
যায়
তিনি
আমার
থেকে
বেশি
হিন্দু
। উনি কোরান
পড়েছেন
কিনা
সন্দেহ
আছে
কিন্তু
রামায়ণ
মহাভারত গীতা
উপনিষদ
যে
পড়েছেন
এটা
চাক্ষুষ প্রমাণ
আমি
নিজে
। কারণ ঐ
বইগুলো
তিনি
আমার
বাড়ি
থেকেই
নিয়ে
গিয়েছিলেন পড়বেন
বলে
। তিনি নামাজ
পরেন
বছরে
দুই
দিন
। ছোট ঈদ
ও
বড়
ঈদ
এ
। তবে কলেজে
সরস্বতী পূজার
হোতা
ছিলেন
তিনি
। দুর্গাপূজাও করেছেন
একবার
। তাঁর কল্যাণে লেগসে
দুর্গাপ্রতিমা আসে
। দুর্গা পূজার
পুষ্পাঞ্জলি দিতে
কখনোই
ভুলেন
না
এ
হেন
আবুদা
একদিন
হঠাৎ
বলে
“বুঝলি
আজকাল
বড্ড
ভয়
হয়”। আমি অবাক
। আবুবেকর
এর কোন দুষমন আছে বলে তো জানি না । যে মানুষের ভদ্রতার উদারহন
দেয়
লোকে
। যার সাথে
ঝগড়া
হওয়া
দুষ্কর
কারণ
তিনি
কখনো
কাউকে
অপমান
করেন
না
, ছোট
করেন
না
, সবসময়
মানুষ
কে
সাহায্য করেন
তাঁর
ভয়টা
কি
হতে
পারে
জানতে
চাইলাম
। আমি বলি
“সেকি
। ভয়টা কি”। যেটা উত্তর
পেলাম
তাতে
লজ্জায়
আমার
মাথা
হেঁট
হয়ে
গেল
। আমি লজ্জাহীন মানুষ
। লজ্জা তাদের
থাকে
যারা
অন্যদের পরোয়া
করে
। আমি আজন্ম
বেপরোয়া মানুষ
। সেটাই আমার
অহংকার
। সেই আমি
এতটা
লজ্জা
আগে
কখনো
পেয়েছি
বলে
মনেহয়
না
। আমার এই
গল্পের
শুরু
ঐ
লজ্জা
দিয়ে
। নিজেকে নিয়ে
এতটা
লজ্জার
কারণ
টাই
জানাবো
বলে
আজ
কলম
ধরেছি
।
প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে সু আর কু খুব জড়াজড়ি করে বাসকরে । কু টাকে সু
এর থেকে দুরে সরানো সহজ কথা নয় । আমি রাজনীতি করিনা । বরং যারা করে তাদের থেকে বহু
দুরে থাকি । কিন্তু গত ইলেকশনটা র ফলাফলের জন্য আমি খুব উৎসহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম
। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ফলাফল এর জন্য। আমি খুব আনন্দিত তবে বিজেপি র জয়জয়কারের
জন্য নয় । আমি আনন্দিত এই কারণে যে আমাদের দেশের মুসলিম সমাজ আবার জানিয়ে দিল তারা
কতটা ভারতীয় । তারা আবার জানিয়ে দিল দেশ সবার আগে । তারা বিজেপির গেরুয়া বাহিনী কে যে কেয়ার করেনা, ভয় পায়না সেটা তারা জানিয়ে
দিলো । তারা জানিয়ে দিল তারাও উন্নতি চায় ভারতবর্ষের । তারা জানিয়েদিল ভয় দেখিয়ে লাভ
নাই । ভারতবর্ষের আকাশ বাতাস জল ও মাটিতে তাদের সমান অধিকার । যে সব নির্লজ্জ অমানুষরা
ধর্মের নামে নোংরামি করে মারামারি করে তাদের এবার ঐ বদমাশি বন্ধ করা উচিত । গোমাংসের
তামাশা আর মুসলিম মানেই দেশদ্রোহী এই প্রচার বন্ধ করা প্রয়োজন । তাদের “জুজু আসছে”
বলে ভয় দেখানো বন্ধ করা প্রয়োজন । “মুসলিম তোষন” আজ মুসলিম সমাজের কাছে অপমানজনক
একটা শব্দ ।
আমাদের দেশে অনেক সমস্যা । বেকারত্ব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অনাহার আমাদের
মুখ্য সমস্যা । সুচিকিৎসা সুবিচার সু-শিক্ষাব্যবস্থা উধাও হয়ে গেছে । মুল সমস্যা আজ
নাড়ী সুরক্ষা আর মুসলিম আতঙ্ক যেটা সম্পূর্ণভাবে উদ্দশ্যপ্রনদিত ভাবে তৈরিকরণ । কিছু
অমানুষ যাদের সংখ্যা ভীষণ কম কিভাবে ১২৫কোটি মানুষকে উদভ্রান্ত করে দিতে পারে ভারতীয়
না হলে বোঝা মুস্কিল । নাড়ী-সুরক্ষা এক তামাশা যটা প্রথম-পর্বে জানিয়েছি । দ্বিতীয়-পর্বে
জানাবো কিভাবে মুসলিম সমাজ ভারতে আতঙ্কিত ।
আমার দুনিয়া বড্ড ছোট । সে দেশেই হোক বা বিদেশে । চারদিকে শুধু দেওয়াল । আমার পৃথিবীটাকে দেওয়াল দিয়ে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে । আর এই দেওয়ালের উপর ছাদ লাগিয়ে ছোট ছোট খুপরি । সেটাই আমাদের দুনিয়া । আকাশ টাকে কেড়ে নিয়েছে ঐ ছাদ আর বিরাট পৃথিবীর ছোট্ট একটুকরো ঘড় নাকি আমার জন্য বরাদ্দ । দিগন্ত-জোরা খোলা-মাঠ যেখানে কোন দেওয়াল দিয়ে পৃথিবীকে কেউ ভাগাভাগি করবেনা এমন পরিবেশ দুষ্কর । দিগন্তবিস্তৃত স্বচ্ছ আকাশের দেখা আজ আর পায়না । এই খুপরি ঘড়ে থেকে মনটাও ভীষণ ছোট হয়ে-গেছে । এই ছোট্ট দুনিয়া টুকু বাঁচিয়ে রাখতেই কত মারামারি কত দুশমনি । দেওয়াল ছাড়া মাটির কথা আজ যেন কেউ ভাবতেই চাইনা । বিশাল একটা স্বচ্ছ আকাশ আর খুঁজেই
পায় না । সবকিছুতেই ভেদাভেদ । এটাই এখন সত্যি । শুধু নিজের বেঁচে-থাকাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য ।ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ আজ আর কেউ বাদ দিতে পারিনা । কোন ধর্ম কতটা শক্তিশালী কার কত জনবল সে নিয়ে আমরা সবাই আজ এক যুদ্ধে ব্যস্ত । এ বড় ভয়ংকর যুদ্ধ ।
হাসান খালেদ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন । তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন । কেউ দেখল না । দুই তিন দিন পরে তার লাশ পাওয়া গেল । তিনি তো আত্মহত্যা করেন নি । তাহলে তার মৃত্যু কীভাবে হল— এটি আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি । একদিন আমাদের ক্ষেত্রেও যে এমন হবে না - এর নিশ্চয়তা কি? আমি আতঙ্কিত । আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়। জানি সবাই বলবে বোকা রাম তুমি ভারতীয় । ভারতবর্ষ হিন্দুদের দেশ । কিন্তু আমি বলি পরিসংখ্যান অন্য কথা বলে । মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে ছিল ইন্দোনেশিয়া। এই দেশটির জনসংখ্যা বিশ কোটিরও বেশি ।20 কোটি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। ১৭ কোটিরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে পাকিস্তান রয়েছে তৃতীয় স্থানে । ২০০৪ সালে
১৬
কোটি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ভারত ছিল তৃতীয় স্থানে। চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ । পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মিশর ও নাইজেরিয়া। বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে ইরান রয়েছে সপ্তম স্থানে। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে তুরস্ক, আলজেরিয়া ও মরক্কো ।
১৯৮০ সালে বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ কোটি। ২০০৪ সালে এই সংখ্যা একশ ত্রিশ কোটিতে পৌঁছে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখা গেছে ভারতে। যাই হোক, মুসলিম জনসংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকায় আজ হলপকরে বলা মুশকিল কাল ভারতে কি হবে কারণ হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমেই কম হচ্ছে । ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার বর্ধিত-হার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে একথা মানতে অসুবিধা হলেও ভীষণ ভাবে সত্যি ।
আমার গল্পটা ছিল অন্য । হয়তো মনে হবে
অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা কিন্তু তা নয় । আমি শুরুতেই বলেছিলাম আজ আবুবেকর ভয় পায় । আমি জানতে
চেয়েছিলাম ভয়টা কিসের ।
তিনি বললেন “গত কয়েকদিন হল একটা খারাপ
স্বপ্ন বারবার দেখি” ।
আমি জানতে চাইলাম স্বপ্নটা কি ।
তিনি বললেন “আমি দেখি কোন কারণে গ্রামের
বাড়িতে গেছি । প্রায় সন্ধ্যে । নিজের গ্রাম নিজের বাড়ি । সন্ধ্যে হলে ভয় কি । কিন্তু
বাড়ি গিয়ে দেখি সেখানে কেউ নাই । জন শূন্য “।
আমি বলি “তারপর”।
আবুদা বলে “তারপর আমি পাশের খালার
বাড়ি যাই । দেখি সেখানেও কেউ নাই । একটু চিন্তিত হয়ে বাইরে এসে রাস্তায় দাঁড়ায় । হঠাৎ
দেখি ঐ আলো আঁধারে বেশ কিছু লোক আমার দিকে ছুটছে । জানিনা কেন আমার সন্দেহ হয় । আমিও
ছুটতে শুরু করি । কিছু পরে তারা আমাকে ধরে ফেলল” ।
আমি বলি “তারপর”।
আবুদা বলে “তারপর আমি দেখি ওদের হাতে
বিভিন্ন অস্ত্র । একজন আমাকে আঘাত করার জন্য একটা লম্বা তরবারি তুলেছে । আমি ভয়ে চিৎকার
করি । তাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়” ।
আমি আর তারপর না বলে শুধু মানুষটাকে
দেখি ।
আবুদা বলে “আমি বেশ কয়েকদিন এটা দেখছি
। মাঝেমধ্যে । কি ব্যাপার বল তো”।
আমার বলার কিছু ছিলনা ।
রাজনৈতিক নেতারা বা নেত্রীরা এখনও
মানতে পারছেন না ৯১ শতাংশ উত্তরপ্রদেশের মুসলিম মোদীর উন্নয়ন এর ভাবনাকে সমর্থন করেছে
। সব মুসলিম মহিলা ফতোয়ার তোয়াক্কা না করে যুগোপযোগী ভাবনাকে সমর্থন করেছে । এটা মেনে
নিলে তাদের রাজনৈতিক ব্যবসা লাটে উঠবে সেটা তারা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে ।
আমার বক্তব্য এটাই প্রকৃত পরিবর্তনের
সময় । আমাদের এই ভেদাভেদ দুরে সরিয়ে মুসলিমদের মানসিক আতঙ্ক দুর করি । তাদের ভালবাসি
। ভালভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিই । হয়তো আমরা ভুলে-গেছি ইতিহাস । মোগলরা আসার পর হিন্দুরা
নিজের দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে গেছিলেন । তখন কিন্তু অধিকাংশ মুসলিম তাতে অংশ
নেয়নি । তারা হিন্দুর পাশাপাশি থেকেছে । এটা-ঠিক
তারা মুসলিম নবাব বাদশাদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেনি কিন্তু সেদিন তারা যদি
পাশে না থাকতো আমাদের কোন চিহ্ন আজ থাকতো না এটা বিজেপির গেরুয়া বাহিনীর ভোলা উচিত
না । হিন্দু মহাসভা বা আর এস এসের আজকের ভারতে যে মুসলিম বিরোধী প্রচার করছে সেটা ভয়ংকর
ভুল । মুসলিমদের সমস্যা হল অধিকাংশ মুসলিম কোরানকে বিশ্বাস করে। কিন্তু যারা লিবারেল
তারাও বলে আসলে গোঁড়ারা কোরানকে বুঝতে ভুল করেছে যদিও তারা মুখ-ফুটে বলতে সাহস পায়না
। যেমন আজ ও হিন্দু বাঁদর দেখে হাত জোর করে নমস্কার করে তেমনি কোন মুসলিমের সাহস নেই
বলার যে কোরান ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি বই। তাতে অনেক ভুলভাল ও অমানবিক কথা লেখা আছে। অনেক
আইন আছে যা একুশ শতাব্দীতে অ্যাবসার্ড।
কট্টর হিন্দু ছাড়া অনেকেই কিন্তু বলে
যে হিন্দুদের বেদ, উপনিষদ মোটামুটি ঠিক হলেও পুরাণ প্রধানত: বাচ্চাদের গল্পে ভরা। আমরা
কলেজে পড়ার সময়ে শিবলিঙ্গ নিয়ে এমন জোক করেছি যা এখানে লেখা যাবেনা। হজরত মহম্মদকে
নিয়ে জোক করলে আর দেখতে হবে না । কিন্তু এটা প্রকৃত ভারতীয় মুসলিম চরিত্র নয় । তারা
অনেক বেশি উন্নয়নশীল । তারা শিল্পী । তারা খুব বুদ্ধিধর । তারা দেশপ্রেমিক ও মানবিক
। তাদের যে সমস্যা তাকে বলে “ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট” । তৈরি করা সমস্যা ।
অশিক্ষিত হিন্দুদের সংখ্যাও বেড়েছে
ভয়ংকর-ভাবে । আমার চিন্তন নিয়ে সেরকম কোনও অ্যানালিসিস হয়েছে কিনা জানা নেই । আমার
বক্তব্য সুন্দর বাস্তবকে অন্যভাবে প্রোজেক্ট করে মানুষের মন বিষাক্ত না করাই ভাল ।
এতে আবুবেকরদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয় । যার ফল হয়তো খারাপ হবে ।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন
মানুষের আর একটা প্রাণ আছে । সেটা
শারীর-প্রাণের চেয়ে বড়ো ।
সেটা হল তার মনুষ্যত্ব ।
এই মনুষ্যত্বটা হারিয়ে বেঁচে থেকে
কি লাভ ।
শেষ
Comments
Post a Comment